নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্য, শিল্প ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে এবং সিউলস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সার্বিক ত্বত্তাবাধানে উভয় দেশের মধ্যে ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ অন্বেষণ’ সম্পর্কিত প্রথম দ্বিপক্ষীয় বৈঠকটি বুধবার (২২ জানুয়ারি) দুপুর ২.০০ টায় অনলাইনে (জুমের মাধ্যমে) অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে দুই দেশের ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ এবং স্বনামধন্য বাণিজ্যিক সংস্থার প্রতিনিধিসহ প্রায় ৬২ জন অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার মান্যবর রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-গুন (Lee Jang-keun) তার পূর্বে ধারণকৃত একটি বার্তায় এই বৈঠকের সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
উভয় দেশের ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ আলোচনাকালে পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার উপর জোর দেন। চীন, ভারত এবং আসিয়ান অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থলে অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই বিনিয়োগ আকর্ষণে সমর্থ হয়েছে যা তার অবকাঠামো সম্প্রসারণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বিকাশে সহায়ক হয়েছে বলে দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্য, শিল্প ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক জনাব ইউন-জং চুন (Yoonjong Chun) মন্তব্য করেন। এর ফলে, বাংলাদেশের প্রতি কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের আগ্রহও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বৈচিত্র্যকরণের উপর জোর দেন এবং ইস্পাত, জাহাজ নির্মাণ, রাসায়নিক ও উচ্চ প্রযুক্তির শিল্প সমুহকে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেন।
বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব জনাব মোঃ আবদুর রহিম খান, বাণিজ্য নীতিমালা তৈরির ক্ষেত্রে সরকারের প্রচেষ্টার উপর আলোকপাত কালে বাংলাদেশের রফতানিকৃত পণ্যের বৈচিত্র্যকরণের উপর জোর দেন এবং বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকারের উদ্যোগসমুহ তুলে ধরেন। বাংলাদেশে পণ্যের বৈচিত্র্যকরণের এই সুযোগ নিয়ে তিনি কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আহবান জানান।
রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম তার স্বাগত বক্তব্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত সহযোগিতার সংক্ষিপ্ত বিবরণসহ দক্ষিণ কোরিয়া কর্তৃক বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্রসমুহ যেমন-সুনীল অর্থনীতি,জাহাজ শিল্প, বায়োটেক শিল্প, মাছ এবং সমুদ্র শৈবাল প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র স্হাপন ইত্যাদি উল্লেখ করেন। তাছাড়া, দুই দেশের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ স্থাপন এবং মতবিনিময়ের উপরেও তিনি জোর দেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার মান্যবর রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-গুন (Lee Jang-keun) তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরিস্থিতি এবং এর ভবিষ্যত সম্পর্কে দিকনির্দেশনামূলক একটি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন। দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করার লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে এই বৈঠক সহায়ক হবে বলে রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (কোইমা)-এর চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব হং গুয়াং-হি (Hong Kwang Hee)-এর মতে এই বৈঠক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে এবং দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে বাণিজ্য সংক্রান্ত কাঙ্ক্ষিত নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে অবদান রাখবে। তিনি বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উভয় দেশের সরকারের পক্ষ হতে অব্যাহত সহযোগিতা প্রদানের আহ্বানও জানান।
এরপর, কোরিয়া বাণিজ্য-বিনিয়োগ প্রমোশন এজেন্সি (কোটরা) কর্তৃক ‘অর্থনৈতিক প্রবণতা এবং বাংলাদেশে কোরিয়ার ব্যবসায়িক উপস্থিতি’, কোইমা কর্তৃক ‘ভোক্তা বাজার ও আমদানিযোগ্য পণ্য’ বিষয়ক এবং সিউলস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক ‘বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের সুযোগ অন্বেষণ’ সংক্রান্ত উপস্থাপনা প্রদান করা হয়। পরে, প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণকারীরা এই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ককে ভবিষ্যতে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যেকার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রসমুহ নিয়ে দিকনির্দেশনামূলক মতামত প্রকাশ করেন।
প্রবাসআলো/ এম এইচ