মরিয়ম মুন্নি: দক্ষিনপাশের জানালা থেকে সোজা যে পাইন গাছটি দেখা যায় তাতে এক নীল রঙা সংসার দেখা যায় ইদানীং। হয়তো আগেও ছিলো আমি দেখি নি। কিংবা আমার চোখ কখনো জানালা গলে বেরুবার অবকাশ পায় নি। মনে হচ্ছে শ্যামা পাখি, হ্যাঁ শ্যামা পাখি-ই। মা মা-বাবা আর সাথে দুটো ফুটফুটে ছানা মিলেই বসবাস। আশ্চর্য তারা আমার রাতের ঝাপসা চলমান অবয়বকে হয়তো চেনে। হয়তো আমার সিগারেট খাওয়ার অলস অবসর তারা উপভোগ ও করে।
আজ এখানে আকাশ ভাঙা বরষা। কোথাও রবীন্দ্র সংগীত বাজছে না, খিচুড়ি রান্না হচ্ছে না। কিন্তু পাইনগাছের বা দিকের কিনারে এক গাছে অজস্র কদম ফুল ফুটে আছে। বিশ্বাস হচ্ছে না। এমন অজানা জায়গায় কদমফুল কি করে এলো? আমার মতো কোন ভুলো মনের প্রেমিকের হাত ধরে নয় তো? ভুলে গিয়ে ফুল ফেলে চলে যাওয়া প্রেমিক! কি জানি….এমন উথাল পাতাল মেঘ কি করে অগ্রাহ্য করতে হয় তার উপায় কি মহাবিশ্বের কোথাও নেই!
শ্যামা পাখির বাচ্চা দুটোর মাঝে কেন জানিনা একটিকে আমি মেয়ে ধরে নিলাম…..। বৃষ্টিতে সিগারেটের ধোঁয়া আরো নেশাতুর করে তুলছে ক্রমশ; যদিও এখন খুব কম নিকোটিনের সিগারেট খাই আজকাল। হুম, ঐ নীলচে চুপ করে জ্বলজ্বলে চোখে তাকিয়ে থাকা ছানাটিকে আমার ব্রেইন ধরে নিয়েছে সে আমার থেকে সহস্র মাইল দূরে রেখে আসা আমার মেয়ে। বৃষ্টির ছাঁটের নেশায় কি না জানি না নাকি স্মৃতির ক্লান্তিতে….আমি আমার মেয়েকেই দেখতে পাচ্ছি চোখের সামনে।
কিন্তু পাইন গাছে না! একদম কদম ডালের ফুলের থোকায় নেমে এসেছে। আর বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সকল বৃষ্টি ধারা তার আনন্দ বিষাদের মাখামাখি করেছে। তাকে আরো নীল দেখাচ্ছে। চোখ দুটো আরো জ্বলজ্বল করছে। স্হির হয়ে আমাকে দেখছে। আমি এলানো গায়ে আর শক্তি পাইনা। হয়তো আমি চাই না আমাদের কদম ডালের পৃথিবীর শ্যামা কন্যা, শ্রাবণ ধারা, আমি আমরা যেন আরো কিছু মহাকাল থাকি। থাক না পাইন গাছের সেই মা-বাবা পুত্র কন্যারা অবাক চোখে তাকিয়ে…। পৃথিবীর শ্রান্ত বাবাদের কি এসে যায় তাতে…….।
লেখক: পিএইচডি গবেষক (ইয়াংনাম বিশ্ববিদ্যালয়, দক্ষিণ কোরিয়া)