ইসলামে #হালাল_হারামের বিধান (কোরিয়ার পেক্ষাপট) – পর্ব ১
এই বিষয়ে পর্যাপ্ত বিশ্লেষণধর্মী লিখা লেখার মত পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও কতক ইসলাম প্রিয় ভাইদের অনুরোধে কিছুটা লিখার চেষ্টা। আপনার চোখে কোন ভুল পরিলক্ষিত হলে আমাকে অবহিত করার অনুরোধ রইলো।
দক্ষিণ কোরিয়া এশিয়া মহাদেশের মধ্যে উন্নত একটি দেশ। এদেশের অধিকাংশ মানুষেরই কোন ধর্ম নেই বা বিশ্বাস করেন না। কঠোর পরিশ্রমই এই দেশের মানুষের “পরম” ধর্ম বলে বিবেচ্ছ বলে আমার ধারনা। কিছু মানুষের ধর্ম বিশ্বাস থাকলেও তাদের দৈনন্দিন জীবনের আমলের পরিমাণ তুলনামূলক অনেক কম বলেই আমার চোখে দেখা বা বিশ্বাস। তবে, সকল ধর্মেই কিছু সংখ্যক ধর্মভীরু মানুষ অবশ্যই বিদ্যমান। আমার কথাগুলো সেই সকল ধর্মভীরু মানুষদের জন্য একান্ত ভাবে প্রযোজ্য নয়।
ভূমিকা বেশি লম্বা না করে আমার মূল কথায় ফিরে আসি। ইসলাম ধর্মে আমাদের কারো কথা অথবা ব্যাখ্যা ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য নয়, যতক্ষণ না পর্যন্ত আমাদের কথা পবিত্র কুরআন এবং সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত। এজন্য, আমার কথাগুলো এর মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করবো ইন শা আল্লাহ্। হালাল-হারামের মানদণ্ড নির্ধারণ আমাদের কারো ব্যক্তিগত বিষয় নয়। মহান আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের প্রিয় রাসুল (সাঃ) এর মাধ্যমে তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ্। প্রথমত, সেই বিষয়গুলো আজকে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করতেছি, ইন শা আল্লাহ্।
মহান আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কুরআনে তাঁর সৃষ্টির ব্যাপারে স্পষ্টত বলেছেন যে, তাঁর সকল সৃষ্টিই আমাদের জন্য নেয়ামত। যেমনঃ
“তোমরা কি দেখ না আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে যাকিছু আছে, সবই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করে দিয়েছেন এবং তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নেয়ামতসমূহ পরিপূর্ন করে দিয়েছেন? এমন লোক ও আছে; যারা জ্ঞান, পথনির্দেশ ও উজ্জল কিতাব ছাড়াই আল্লাহ সম্পর্কে বাকবিতন্ডা করে।” (সূরা লোকমান – ২০)
এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ তায়ালার মানুষের প্রতি তাঁর অপরিসীম অনুগ্রহের কথাই জানিয়ে দিয়েছেন। উপরের আয়াতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ্র সকল সৃষ্টি আমাদের জন্য অবশ্যই হালাল হওয়ার কথা। তবে মহান আল্লাহ্ তায়ালা নিজেই যদি সৃষ্ট সব কিছুর মধ্যে থেকে কিছু কিছু জিনিস হারাম করে দিয়ে থাকেন, তাহলে সে কথা স্বতন্ত্র এবং তা আমাদেরকে অবশ্যই মানতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
‘আল্লাহ তাঁর কিতাবে যা হালাল করেছেন তা হালাল, যা হারাম করেছেন তা হারাম এবং যে বিষয়ে চুপ রয়েছেন তা ক্ষমাযোগ্য। সুতরাং তোমরা আল্লাহর ক্ষমা লাভে অগ্রগামী হও। আল্লাহ কোনো কিছু ভোলেন না।’ (মুসতাদরিকে হাকিম, হাদিস : ৩৪১৯)
নবী করীম (সাঃ) আরো বলেছেনঃ
“আল্লাহ্ তায়ালা কতগুলো কাজকে ফরয করে দিয়েছেন। অতএব তোমরা তা নষ্ট করে ফেল না। তিনি কতগুলো সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, তোমরা সে সীমা লংঘন করো না। কিছু কিছু জিনিষকে তিনি হারাম করেছেন, তোমরা তার বিরোধিতা করো না। আর তোমাদের প্রতি অনুগ্রহবশত- না ভুলে গিয়ে অনেক বিষয়ে তিনি পূর্ণ নীরবতা অবলম্বন করেছেন। অতএব সে বিষয়ে তোমরা বিতর্কে লিপ্ত হয়ো না।” (তিরমিযী, ইবনে মাযাহ)
মহান আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কুরআন মজিদে বলেছেন যেঃ
‘আল্লাহ যা কিছু তোমাদের জন্য হারাম করেছেন তা তিনি নিজেই সুস্পষ্ট ও ভিন্ন ভিন্ন করে তোমাদের জন্য বলে দিয়েছেন।’ (সূরা আন’আম : ১১৯)
এই আয়াতটি মানুষের কর্ম এবং ব্যবহার্য সকল দ্রব্যাদির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু ইবাদতের ক্ষেত্র এ থেকে স্বতন্ত্র এবং ভিন্নতর। কারণ, এ সম্পর্কে আমাদের প্রিয় রাসুল (সাঃ) এর স্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে। তা হচ্ছে,
“আমাদের এ দ্বীনের মধ্যে শামিল নয় এমন কোন জিনিস যদি কেউ দ্বীনের মধ্যে নতুন করে উদ্ভাবন করে তবে তা অবশ্যই প্রত্যাখ্যান হবে ” (বুখারী, মুসলিম)
এছাড়াও ইসলামে হালাল-হারামের আরো অনেকগুলো আলোচ্য বিষয় বিদ্যমান তবে যেহেতু আমি কোরিয়ার পেক্ষাপটে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো তুলে আনার চেষ্টা করতেছি, সেজন্য আপাতত অন্য কোন বিষয় উল্লেখ করা থেকে আমি বিরত থাকছি।
সন্মানিত পাঠকগণ, উপরের উল্লেখিত পবিত্র কুরআনের আয়াত এবং হাদিস থেকে প্রাথমিক ভাবে যে বিষয়টা প্রতীয়মান হচ্ছে, তা হচ্ছে, হালাল-হারামের বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা রয়েছে। আমাদের কাজ হচ্ছে তা যেনে নেয়া এবং আমল করার চেষ্টা করা। পরবর্তী পর্বে কোরিয়ার বাস্তবতায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় তুলে ধরবো ইন শা আল্লাহ্। আর তা হচ্ছে, কোরিয়াতে যে সকল গোশত (গরু, মুরগী, ভেড়া অথবা খাশি, হরিণ ইত্যাদি) পাওয়া যায়, তা হালাল-হারামের মানদণ্ডে কতটুকু দণ্ডিত ?? !!
লিখাটি লম্বা হওয়ায় দুঃখিত। ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ এবং মহান রবের কাছে উত্তম প্রতিদানের প্রত্তাশা।
লেখক: কামরুল হাছান
পিএইচডি স্টুডেন্ট,
ডিপার্টমেন্ট অফ ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং,
হানকুক ইউনিভার্সিটি অফ ফরেন স্টাডিজ, দক্ষিণ কোরিয়া