দক্ষিণ কোরিয়াতে শুরু হয়েছে নবান্নের আমেজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

추석 (ছুসক)

ছুসক’ হল কোরিয়ার সবেচেয়ে বড় উৎসবগুলোর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য উৎসব । যাকে কোরিয়ার নবান্ন উৎসবও বলা হয়ে থাকে। এ সময় কোরিয়ার কর্মব্যস্ত মানুষ পরিবারের সাথে সময় কাটানোর অনেক একটা সুযোগ পেয়ে থাকে।

সাধারণত সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে ছুসক হয়ে থাকে।এই বছর কোরিয়ার অন্যতম বড় উৎসব ছুসকের ছুটি আগামীকাল বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে। ছুসকের ছুটির পাশাপাশি সাপ্তাহিক দুইদিন ছুটিসহ টানা পাঁচদিনের ছুটি কাটাবে কোরিয়ানসহ কোরিয়ায় বসবাসরত সকল বিদেশী।

প্রতি বছর চন্দ্র অষ্টম মাসের ১৫ তারিখ ছুসক উদযাপিত হয়। ছুসক কে ‘হাঙ্গাউই (한가위)’ নামেও ডাকা হয়। হাঙ্গাউই এর মানে হল মধ্যশীর্ষ। এখানে ‘হান’ হল বড় যা বড় উৎসবের অর্থ বহন করে। আর ‘গাউই’ মধ্য শরৎ কে বুঝায়।

শীত প্রধান দেশ কোরিয়ায় বছরের সবচেয়ে আরামদায়ক সময় শরতের প্রায় মধ্যভাগে সুউচ্চ নীল আকাশ আর নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় কৃষক যখন বছরের শেষ ফসল ঘরে তোলে আর প্রতিটা ঘরে থাকে খাবারের প্রাচুর্য সে সময়টাতে উদযাপিত হয় কোরিয়ার দ্বিতীয় বড় উৎসব ছুসক।

এ কারণে কোরিয়াতে “দ দো মাল্গো দ’ল দো মাল্গো হাঙ্গাউইমান খাত্থারা (더 도 말고 덜도 말고 한가위만 같아라)” প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে। এর অর্থ হল “বেশীও না, কমও না, একদম হাঙ্গাউইয়ের (한가위) মতো হও”। ছুসকে কোরিয়ানরা পূর্বপুরুষদের কবরে সদ্য ঘরে তোলা ফসল ও ফল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। সে উদ্দেশ্যে ছুসকের আগেই পূর্বপুরুষদের কবরের আগাছা পরিষ্কার করে রাখে।

ছুসকের প্রধান খাবার হল সোংফিয়ন (송편)। চাল দিয়ে তৈরী আমাদের দেশের পিঠার মত এই খাবার অর্ধ চন্দ্রাকৃতির মতো বানিয়ে দেবদারু গাছের পাতা দিয়ে ঢেকে ভাপ দেয়া হয়। “যার সোংফিয়নের আকার সুন্দর হয় তার সুন্দর মেয়ে হবে” বলে কোরিয়ান সমাজে একটি প্রচলিত কথা রয়েছে।

ছুসকের প্রধান খাবার সোংফিয়ন (송편)
ছুসকে বছরের সবচেয়ে বড় ও উজ্জ্বল পূর্ণিমার চাঁদ দেখা যায়। তাই ঐতিহ্যগতভাবে ছুসকের রাতে পূর্ণিমার চাঁদ দেখে মনোকামনা পূর্ণ করার খেলা “দাল্মাজি(달맞이)” বা বিভিন্ন বয়সী নারীরা ছন্দের তালে তালে নেচে “খাংগাংসুল্লে(강강술래)” খেলত।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় কোরিয়ানদের উৎসব পালনেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এখন আর ছুসকের রাতে পূর্ণিমার চাঁদ দেখে দাল্মাজি বা খাংগাংসুল্লে খেলা হয় না। তবে ঘরে ঘরে সোংফিয়ন তৈরি আর পূর্ব পুরুষদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন এখনও একইভাবে পা্লিত হয়। নগরায়নের এই যুগে কোরিয়ানরা পরিবার-পরিজনের সাথে মিলিত হয়ে আনন্দঘন কিছু সময় কাটানোর একটি বড় উপলক্ষ হল ছুসক।

ছুসকের সময় মূলত কোরিয়ায় পরিবারিক মিলনমেলায় পরিণত হয়। পরিবারের সকল সদস্য একত্রিত হয়ে প্রার্থনা করে এবং খাবার পরিবেশন করে। ফলে সিউল থেকে সবাই গ্রামের দিকে ছুটে। এইজন্য ছুসকে প্রচন্ড জ্যাম থাকে।

প্রবাস আলো/ মো মিরাজ আহাম্মেদ