প্রত্যাশার মাত্রা কমলেই ভালোলাগার মাত্রা বাড়ে

রুবাইদা গুলশান:

প্রতিদিন নিজেকে একবার করে হলেও বোঝানো উচিত অন্যের ভালোর জন্য যা যা করি তার বিনিময়ে আমি নুন্যতম হাসিও প্রত্যাশা করব না। যদিও এই ব্যাপারটি অত্যন্ত জটিল যে নিজেকে প্রত্যাশাহীনভাবে প্রস্তুত করা কিন্তু তারপরেও আজ থেকেই চেষ্টা করা দরকার। আজ থেকে প্রচেষ্টা শুরু করলে দু’টো দিকে এগিয়ে থাকা যাবে –

১. যেহেতু আজ থেকেই শুরু করেছেন তাই অন্যজনের থেকে অধিক ভালো থাকবেন।

২. আর অন্যজনের হতাশার ধাপের চেয়ে আপনি একটু বেশি ভালো থাকবেন অর্থাৎ অন্যদের তুলনায় আপনার হতাশা কম থাকবে। প্রত্যাশা থেকে যে ধরণের হতাশা তৈরি হয় তা আমাদেরকে হীনমন্যতা শেখায়। সহজে মন খারাপ করে মনে মনে হিসাব করতে বসায় যে —আমি এটা এটা ওর জন্য করলাম আর তার বিনিময়ে ও আমাকে একটা হাসি পর্যন্ত দিতে পারলো না! একটা হাসি নিশ্চয়ই পকেটের টাকা খরচ করে কিনতে হয় না!

প্রত্যাশা এমন একটা ব্যাপার যা আকারে হয়তো ভীষণ ছোট কিন্তু আবেগের দিক থেকে যার ওজন ভীষণ ভারী। ধরুন সারাদিন আপনার সংসারে খাটুনি করছি, বাচ্চা সামলাচ্ছি, রান্না করছি ইত্যাদি। অফিসে বসে আপনি নিশ্চয়ই আমার কষ্ট দেখতে পাচ্ছেন না। অফিস থেকে বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে বাসায় ঢুকছেন আর ব্যাগ রাখতে রাখতে বলছেন, ” সারাদিন বাসায় আরামে থাকো, বাসাতে আর কী কাজ!” ঠিক তখন আপনার স্ত্রীর কিন্তু ভালো লাগবে না একথা শুনতে। সামান্য কথাই তো।

চাইলে এই কথাটি আপনি ঘুরিয়ে বলতে পারতেন সহানুভূতির সাথে যে—” সারাদিন তুমি বাসার মধ্যে থাকো-কত দিক যে সামলাতে হয়। অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে তোমার। তোমাকে একটু সাহায্য পর্যন্ত করতে পারি না! ” যাইহোক আপনার স্বামী বাহির থেকে এসেছে আপনি হয়তো খুশিমনে সালাম দিয়ে হাত থেকে বাজারের ব্যাগ নিলেন। মিষ্টি করে বললেন, সারাদিন পর তোমাকে একটু কাছে পেলাম। সবকিছুই খুব সাধারণ কিছু কথা । কিন্তু সাধারণ এই ছন্দ সবসময় চলে না। কারণ আপনার সঙ্গীর প্রত্যাশা কী কিংবা কতটুকু সে সম্পর্কে আপনি জানার প্রয়োজন মনে করেন না কারণ আপনার সংসার জীবন ইতোমধ্যে বিশ বছর অতিক্রম করেছে।

এই বিশ বছরের উভয়ের মাঝে এমন কিছু গোপন প্রত্যাশার জন্ম হয়েছে যার খবর উভয়ের কেউ কখনও রাখিনি কিংবা রাখতে চায়নি। স্ত্রী ভাবছে এতো সুন্দর করে আমি সংসার চালাচ্ছি আমি কি একটা ধন্যবাদ পেতে পারি না। স্বামী ভাবছে তোমার জন্য আমি কত কত সাক্রিফাইস করি কই কখনও তো একটা ধন্যবাদ দিয়ে হাতটা চেপে ধরে বলতে পারে না – আজকে আর এই হাত ছাড়ব না। সংসারে উভয়ের মাঝে খুনসুঁটি যদি না থাকে তাহলে জীবনটা হবে প্রতিদিন ডাল আর গোশত খাওয়ার মতো একঘেয়ে।

আর এই একঘেয়ে জীবনে প্রত্যাশাকে আকাশচুম্বী না করে প্রত্যাশাকে কমিয়ে আনতে আনতে একদম ১০০% থেকে ২৫% এ নিয়ে আসতে হবে। আর যখন আপনি ১০০% থেকে ২৫% এ আনবেন তখনি ঘটবে রূপকথার মতো পরিবর্তন । তখন দেখবেন আপনার ভালোলাগার রঙ বদলে যাচ্ছে; বদলে যাচ্ছে আপনার বিরক্তি, বদলে যাচ্ছে আপনার আপনি। এখন এক নতুন মানুষ হয়ে গেছেন।

উড়ে যাওয়া মেঘের মতন হতাশা সরে যাচ্ছে সব; মানুষ আপনার জন্য কী কী করতে পারে এই ভাবনাটা বদলে হয়ে যাচ্ছে —আপনি মানুষের জন্য কী কী করতে পারেন! আপনার প্রত্যাশার মাত্রা কমছে ; আপনি হাসছেন মন থেকে। আপনার ভালো লাগছে কারণ আপনি বিশ্বাস করতে শিখে গিয়েছেন যে, প্রত্যাশার লেভেল কমতে থাকলে ভালোলাগার মাত্রাটা বাড়তে থাকে। সহজ জীবন পেতে চাইলে নিজেকে বোঝাতে হয় একজীবনে সবকিছু পেতে নেই-অপূর্ণতার মাঝেই লুকিয়ে থাকে জীবনের সুখ! ছোট্ট জীবন! অভিমান পুষে দূরে থাকতে নেই;কাছে এসে হাতটা ধরতে হয় কখনও । অধিক প্রত্যাশায় সে হাত ফেরত পাঠাতে নেই।

লেখক: কবি ও কথাশিল্পী

প্রবাসআলো/এমএইচ