প্রবাসআলো ডেক্সঃ ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে মালয়েশিয়া প্রবাসী শাহজাদপুর উপজেলার মাে : সাইদুল ইমলাম ( ২৬ ) নামের এক যুবক বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছে । শনিবার ভােরে তার লাশ বাড়িতে এসে পৌঁছায় । এলাকাবাসী জানায় , পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে ২০১৪ সালে মালয়েশিয়া পাড়ি জমান সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলাখুকনী নতুন পাড়া গ্রামের জিলহজ মন্ডলের নাতি ও মােঃ আব্দুল আউয়ালের ছেলে মাে : সাইদুল ইসলাম ( ২৬ ) । পিতা – মাতার ৩ সন্তানের মধ্যে সে ছিল বড় সন্তান এবং পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি । সাইদুল মালয়েশিয়ার মনিপুরা সিটির তােজোটিয় ইন্ডিয়ান বিলাস মনােফ কিয়ারা নামক একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিল । পরিবার [ সূত্রে জানা যায় , সাইদুল অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের কারণে অসুস্থ বােধ করে । চিকিৎসা নেওয়ার জন্য অফিসে ছুটি চাইলেও সে ছুটি পায়নি । পরে অসুস্থ শরীর নিয়েই কয়েক দিন কাজ করে । অসুস্থতা বেশি হলে সাইদুল বাড়ি আসার জন্য তার বাবার কাছে টাকা চায় এবং অসুস্থতার কারণে কান্নাকাটি করে , পরে সাইদুলের পিতা তাকে ৬০ হাজার টাকা পাঠায় । সে ৬ জানুয়ারী সকালে ছুটি চেয়েও না পেয়ে কাজ বাদ দিয়ে দেশে আশার জন্য টিকেট কাটতে যান এবং ৩ তারিখের বিমানের টিকেট কাটেন । তারপর কোম্পানীর লােকজন আর তাকে কর্মস্থলে প্রবেশ করতে দেয়নি ।
অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথাও যাওয়ার জায়গা না পেয়ে এক প্রবাসী বাংলাদেশীর দোকানীর আশ্রয় নেয় সাইদুল । একটি ঘরে একা থাকা অবস্থায় ৮ জানুয়ারী সাইদুল বেশি অসুস্থতা বােধ করলে তার পরিচিত প্রবাসী সহকর্মীদের কাছে ফোন করে সাহায্য চায় । বাংলাদেশি সহকর্মীরা তাকে সাহায্য করতে চাইলেও তাদের কর্মরত প্রতিষ্ঠান কাউকে তার সাহায্যে আসতে দেয়নি । পরিবার থেকে অভিযােগ করা হয় , তাদের প্রতিষ্ঠানটি থেকে জানিয়েছিল যে ব্যক্তি কাজ বাদ দিয়ে তার সাহায্যে এগিয়ে যাবে তাকেই চাকরিচ্যুত করা হবে । সাইদুলের পিতা আব্দুল আউয়াল জানান , সাইদুল কোথাও সাহায্য না পেয়ে আমার সাথে কথা বলে কান্নাকাটি করে সাহায্যের জন্য লােক পাঠাতে বলে ৷ পরে বিনা চিকিৎসায় ৯ জানুয়ারী সকালে সাইদুল মৃত্যুর কোলে ঢােলে পরে । পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎকরা জানায় সে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছে । উল্লেখ্য , সুদুর মালায়েশিয়া থেকে বাবাকে ফোন করে বলে , বাবা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে কেউ যদি আমাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাতাে তাহলে আমি সুস্থ হয়ে যেতাম , মৃত্যুর আগে বাবা মাকে ইমােতে অসংখ্য ভােয়েস বার্তা পাঠায় , ফোন করে বলে আমাকে টাকা পাঠাও আমি বাংলাদেশে যাব। শনিবার ( ১৬ জানুয়ারি ) ভােরে গ্রামের বাড়িতে সাইদুলের লাশ এসে পৌঁছালে এলাকাজুড়ে শােকের ছায়া নেমে আসে । বাবা মায়ের ও স্বজনদের আহাজারীতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে যায় ।
তারা আকুতি করে জানান , আমাদের সন্তানের মতাে যেন কারাে সন্তান বিনা চিকিৎসায় প্রবাসে মারা না যায় । মালয়েশিয়াতে আত্মীয় – স্বজন থাকা সত্ত্বেও কোম্পানির চাকুরী হারানাের ভয়ে কেউ কাছে আসতে পারেনি । তার এরকম নির্মম মৃত্যুর খবরে এলাকার জনসাধারণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে । এলাকার লােকজন । জানিয়েছে , প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রচুর টাকার বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠায় , কিন্তু সরকারিভাবে তাদের নিরাপত্তা ও সুযােগ সুবিধার জন্য কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় না । তারা দ্রুত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহযােগিতার পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান ।
প্রবাস আলো // এ,এস,এম