তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য মাদ্রাসা চালু।

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য রাজধানীতে চালু হয়েছে একটি মাদ্রাসা। বেসরকারি উদ্যোগে ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের লোহার ব্রিজ ঢাল এলাকার তিনতলা একটি ভাড়া বাড়িতে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শুক্রবার অনাবাসিক এ মাদ্রাসাটির উদ্বোধন করা হয়। যেকোনো বয়সী হিজড়া ভর্তি হতে পারবেন এখানে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, কেরানীগঞ্জ ও বাড্ডা এলাকার তৃতীয় লিঙ্গের ৪০ জন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

এই মাদ্রাসায় অর্থায়ন করেছে মরহুম আহমেদ ফেরদৌস বারী ফাউন্ডেশন। ‘দাওয়াতুল কুরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসা’ নামে তৃতীয় লিঙ্গের জন্য দেশে এটাই প্রথম কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এটি চালুর ফলে এই জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় ফিরিয়ে আনা সহজ হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।

দুই পর্বের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সকালে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ হিজড়া কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবিদা সুলতানা মিতু। বিকালের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কামরাঙ্গীরচরের বাইতুল উলূম ঢালকানগর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি জাফর আহমাদ। উপস্থিত ছিলেন মাদ্রাসার পরিচালক আবদুর রহমান আজাদ, আহমেদ ফেরদৌস বারী ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম শুভ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইদুল ইসলাম মাদবর, মাদ্রাসার প্রশিক্ষক আবদুল আজিজ হুসাইনী।

আবদুর রহমান আজাদ বলেন, এই মাদ্রাসায় প্রথমে হিজড়াদের কুরআন শিক্ষা দেয়া হবে। এছাড়া কওমি শিক্ষা সিলেবাস অনুসারে নূরানী, নাজেরা, হিফজুল কুরআন ও কিতাব বিভাগ চালু হবে। শুক্রবার থেকেই ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পরবর্তীতে এখানে হিজড়াদের কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে অভিজ্ঞদের নিয়ে আরেকটি আলাদা বিভাগ চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। হিজড়াদের মূলধারায় ফিরিয়ে এনে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মাদ্রাসাটিতে ১০ জন প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন বলে জানান এই শিক্ষক।

আবদুল আজিজ হুসাইনী বলেন, আজকের দিনটি বিশ্বের মধ্যে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমার জানা মতে, তৃতীয় লিঙ্গের লোকদের জন্য কোথাও আলাদা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। এটাই প্রথম। এরা সমাজে অবহেলিত, নানা বিষয়ে তারা বঞ্চিত। এমনকি তারা কোনো মসজিদে গিয়েও নামাজ পড়তে পারে না। তাদের এখানে কুরআন শিক্ষা দেয়া হবে। পরবর্তীতে কারিগরি শিক্ষা দেয়ার বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করা হবে।

আজাদ বলেন, ছয় মাস ধরে ঢাকার যেসব এলাকায় হিজড়ারা বসবাস করেন এমন আট জায়গায় গিয়ে তাদের কুরআন শিক্ষা দেয়া শুরু হয়। এরপর হিজড়াদের জন্য নেয়া হয় এই উদ্যোগ। এর উদ্দেশ্য প্রথমত মহান আল্লাহকে খুশি করা। দ্বিতীয়ত মানবিক বিবেচনা করে বিবেকের তাড়নায় হিজড়াদের কল্যাণে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

আবিদা সুলতানা মিতু বলেন, হিজড়ারা যদি সার্বিক সহযোগিতা পায় তাহলে তারা দেশের সম্পদে পরিণত হবে। তাদের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে কাজের সুযোগ দিতে হবে, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে তারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে কিছু করতে যাবে না। অপরাধ কমে আসবে।

  1. মাদ্রাসার জন্য স্থায়ী একটি জায়গার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান কাউন্সিলর সাইদুলতৃ